হাতের নাগালে ১০ ক্যাকটাস

কর্মময় জীবনে ইনডোর প্লান্ট স্বস্তির নিঃশ্বাস এর অপর নাম। দিনদিন মানুষ সবুজের ছোঁয়া পেতে উৎসাহ বোধ করছে, ফলে বাড়ছে ইনডোর প্লান্ট এর ব্যবহার। আপনার ঘরকে অপার্থিব সৌন্দর্যে ভরিয়ে তুলতে ইনডোর প্লান্ট অনন্য পন্থা। বিশ্বে ২৫০০ বেশি ক্যাকটাস প্রজাতি আছে। অল্প অলোতে বাঁচতে পারে এসব ক্যাকটাস, তাই মানুষ ইদানিং এসব ক্যাকটাসে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইনডোরে লাগানো যায় এমন কিছু ক্যাকটাস নিয়ে আজ আলোচনা করবো৷ 

এপিফাইলাম

মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার একটি ক্যাকটাস প্রজাতি। ক্যাকটাস প্রজাতির হলেও এটি মূলত সুন্দর একটি ফুল। বিশেষ এই ফুলটি শুধু রাতে ফোঁটে এবং সকালে চুপসে যায়। গাছটির ডালপালা চওড়া ও সমতল। সুন্দর ফুলটি সাদা থেকে লালচে রঙের হয়ে থাকে। এই ক্যাকটাস এর পাতাগুলোও বেশ সুন্দর। এই গাছ রাখতে কিছুটা জায়গায় প্রয়োজন। এপিফিলাম হাইব্রিড, এপিফিলামস বা জাস্ট এপিস নামে পরিচিত গাছগুলি, তাদের ফুলের জন্য ব্যাপকভাবে জন্মায়, তারা হাইলোসেরিয়া গোত্রের মধ্যে প্রজাতির কৃত্রিম সংকর জাতের বিশেষ করে ডিসোক্যাকটাস প্রজাতি।

নিপল

নিপল এর অন্য নাম ম্যামিলারিয়া ক্যাকটাস। এই ক্যাকটাস অনেকটা স্তনের নিপল এর মতো। সাধারণত বসন্তকালে এর নিষিক্তের সময়। ৫-৬ ইঞ্চির পাত্রে এর পাত্রে একে রাখা যায়। এই ক্যাকটাসে বসন্তের শেষের দিকে ফুল ফোঁটে। ম্যামিলারিয়া প্রজাতি মেক্সিকোতে সর্বাধিক পাওয়া যায় এবং কিছু দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। মাল্টিপেডেল ফুলগুলি ফানেল এর মতো এবং ফানেলের একটি বিশিষ্ট ঘাড় সহ বা ছাড়াই হয়। এর রঙে হলুদ, গোলাপী, লাল, সবুজ এবং সাদা প্যাস্টেল শেড রয়েছে। এগুলি দেহের পরিধির চারপাশে একটি বৃত্ত শীর্ষে উৎপন্ন করে, প্রতিটি ফোলা টিউবারকলের গোড়া থেকে একটি পুষ্প উৎপন্ন হয় যা প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য নির্ধারিত হয়। পৃথক ফুল  দুই দিন স্থায়ী হয়।

সেরিয়াস

সেরিয়াস জামকারু বিশেষ সুন্দর ক্যাকটাস। এই ক্যাকটাসের জন্মস্থল ব্রাজিলে। এর শরীর কাঁটাযুক্ত। সময়ের সাথে সাথে এটি উচ্চতায় ৯ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ডালপালা পাতলা, ১৫ সেন্টিমিটারের বেশি নয়, যদিও মূল কাণ্ডটি ৪০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করতে সক্ষম। ফুলগুলি শুধু পরিপক্ক আবস্থায় দেখা যায়, প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এগুলি সাদা রঙের, এবং পরাগায়িত হলে তারা লম্বা একটি লালচে ফল দেয়, যার মধ্যে অসংখ্য ছোট বীজ থাকে। এই ক্যাকটাস একেবারেই পানি সহ্য করতে পারে না। 

গোল্ডেন ব্যারেল

গোল্ডেন ব্যারেল বা গোল্ডেন বল এর জন্ম পূর্ব মধ্য ম্যাক্সিকোতে। এটি দেখতে গোলাকার। এর চারপাশে কাঁটায় আচ্ছাদিত থাকে। একটি পূর্ণ পাত্রে এর আকার সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর কাঁটাগুলো বেশ বিপজ্জনক। এই ক্যাকটাসের জন্য আলোর প্রয়োজন। এটিতে খুব কম ফুল ফুটতে দেখা যায়। ফ্যাকাসে হলুদ ঘন্টা আকৃতির ফুল মাঝেমধ্যে দেখা যায়। 

ওল্ড লেডি

ওল্ড লেডির অন্য নাম ম্যামিলিয়ারিয়া হাহানিয়ানা। দেখতে চমকপ্রদ এই ক্যাকটাস। এটি মধ্য আমেরিকার একটি জাত।  এর গোলাকার কান্ড আছে যা সাদা মেরুদণ্ডে আচ্ছাদিত এবং নিচেও সাদা। এই গাছটি প্রায় ৪ ইঞ্চি লম্বা এবং ৫ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। এরা খুব বর্ধনশীল এবং একা থাকতে অপছন্দ করে। এই জাতীয় ক্যাকটাস মাথায় একটি মুকুট ধারণ করে এবং লালচে-বেগুনি ফুল দেয়। ফুল ফোঁটা অবস্থায় মনে হয় অস্ত একটা হেড ব্যান্ড। 

বানি ইয়ারস

বানি ইয়ারস দেখতে খোরগোসের কানের মতো। লম্বায় প্রায় দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত হয়। পর্যাপ্ত আলোতে সাদা রঙের ফুল ও বেগুনি রঙের ফুল ফোঁটে। 

ফেরোক্যাক্টাস উইসলিজেনি

ফরোক্যাক্টাস উইসলিজেনিকে অ্যারিজেনা ব্যারেল বা ক্যান্ডি ব্যারেল ক্যাকটাস নামেও ডাকা হয়। বল আকারের ক্যাকটাস হলেও নলাকার আকারে বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে কাঁটাযুক্ত পাঁজরে লাল বা হলুদ ফুল ফোঁটে। এই জাতীয় ক্যাকটাস লম্বায় তিন থেকে ছয়ফুট পর্যন্ত হতে পারে। 

ফিশহুক

ফিশহুক মরুভূমি ও পাথুরে মাটিতে খুব জন্মে। এটি ছোট ক্যাকটাস, সাধারণত ৬-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয়। এর চারপাশ মাছ ধরার হুকের মতো এবং উপরিভাগে সাদা-গোলাপি ফুল ফোঁটে। ফিশহুকের প্রায় ১৫০ প্রজাতি রয়েছে। 

ক্যাপ

ক্যাপ ক্যাকটাস গোলাকার টুপির মতো। দক্ষিণ মেক্সিকো থেকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আমেরিকায় এই ক্যাকটাস বেশি দেখা যায়। স্বতন্ত্র পশমী এবং উজ্জ্বল টুপির মতো কাঠামো তৈরি করে,  একে সেফালিয়াম বলা হয়। এগুলি সাধারণত লালচে রঙের হয় এবং এখানেই ছোট ফুলগুলি উৎপন্ন হয়। ফুলগুলি গোলাপী ফলের দিকে নিয়ে যায় অনেকটা মরিচের মতো আকৃতির। টুপির মতো এর গঠন, তাই এই গাছগুলি সাধারণত টার্কস ক্যাপ ক্যাকটাস নামে পরিচিত।

স্টার

স্টার ক্যাকটাস বেশ সুপরিচিত। দেখতে তারার মতো তাই একে স্টার ক্যাকটাস বলে সম্বোধন করা হয়। এর ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। সবুজ রঙের এই ক্যাকটাসে ফুল ফোঁটে না।  

এগুলো আমাদের দেশের সুপরিচিত ও সহজলভ্য ক্যাকটাস। ঘরে, বেলকুনিতে বা সিড়ির মাঝে এসব ক্যাকটাস  ঘরের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলবে। ক্যাকটাস প্রতিকূল পরিবেশের মাঝে বেঁচে থাকতে সক্ষম তাই নতুন হলে আপনি সহজেই ইনডোর প্লান্ট হিসেবে ক্যাকটাসকে প্রাধান্য দেবেন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *