বারান্দায় লাগান ১০ ঔষধি গাছ

ঠান্ডা , গলা খুশখুশ কিংবা মাথা ধরা। এইসব মোটামুটি জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঔষধ পত্রের পেছনে আমরা টাকা ঢেলে চলেছি। অথচ বাড়ির বারান্দায় কিছু এমন কিছু গাছ লাগালে তার মূল,পাতা ,ফুল,ফল প্রভৃতি থেকে আমরা এইসব “রেগুলার” রোগের প্রতিকার পেতে পারি। 

প্রাচীন বাংলায় জীবনাচরণ নিয়ে খনার বচন প্রখ্যাত হয়ে আছে।

“নিম নিসিন্দা যথা,মানুষ কি মরে তথা?”

গাছ গাছড়ার চিকিৎসা মানবসমাজে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। সারাবিশ্বে প্রায় ৫০ হাজারের মতন ঔষধি গাছ রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেই প্রায় ১ হাজার ৫শ প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। এর ভেতর প্রায় ৮০০ গাছের ঔষধি ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া গেছে। গ্রামবাংলার মানুষ এখনও ঘরোয়া চিকিৎসার কাজে নানান রকম গাছ গাছড়ার ব্যবহার করে । যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এই ব্যবস্থা কিন্তু বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমানিত। আমলকী, হরীতকী, বহেরা, নিম, নিসিন্দা, বাসক, অর্জুন, থানকুনি, শেফালি, জবা, পুদিনা প্রভৃতি উদ্ভিদ মানুষ চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করে আসছে।

তবে শহুরে জীবনে আমাদের ইচ্ছা থাকলেও এত উদ্ভিদ আমাদের বাসার বারান্দায় লাগানো সম্ভব না। এই লেখায় আমরা এমন দশটি উদ্ভিদ সম্পর্কে জানবো যা খুব সহজেই বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে লাগানো যায়। এসব উদ্ভিদ একদিকে যেমন ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজে দিবে ঠিক তেমনভাবেই শহরের ইট-পাথরের ইমারতে আনবে সজীবতা।

তুলসি

তুলসী অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ঔষধি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum sanctum। বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমানে তুলসী গাছ দেখা যায়। উপমহাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তুলসীর ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে তুলসীর বহুল ব্যবহার হয়ে আসছে।

তুলসী একটি চিরহরিৎ গুল্ম। এটি সর্বোচ্চ ২ ফুট উঁচু হয়। সুতরাং, আপনি খুব সহজেই এটি আপনার বাসার বারান্দায় বা ছাদে লাগাতে পারবেন। তুলসী গাছ দিনরাত ২৪ ঘন্টা অক্সিজেন ত্যাগ করে। এজন একে “অক্সিজেন ভান্ডার” বলা হয়।

বাংলাদেশে প্রধানত চার ধরনের তুলসী গাছ দেখা যায় । যথা-

  • বাবু তুলসী
  • রাম তুলসী
  • কৃষ্ণ তুলসী
  • শ্বেত তুলসী

রোগের চিকিৎসায় তুলসীর বহুবিধ ব্যবহার

গ্রাম বাংলায় সর্দি-কাশি লাগলে আজকেও প্রথমে যেই উদ্ভিদটির খোঁজ করা হয় সেটি হচ্ছে তুলসী। তুলসী পাতা বেটে রস করে খাওয়া কিংবা সকাল বেলা মধুর সাথে কাঁচা পাতা চিবিয়ে খাওয়া – উভয় পদ্ধতিই অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া শরীরের কোথাও যদি কেটে যায় সেখানেও তুলসীর পাতা রক্তপাত বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন নামজাদা প্রায় সব চা কোম্পানি-ই তাঁদের প্রোডাক্ট লিস্টে তুলসী চা রেখে দিচ্ছে। এর কারণ একটাই পথ্য হিসেবে তুলসী চায়ের ব্যাপক চাহিদা। একই কথা প্রযোজ্য তুলসী ফ্লেভারের টুথপেস্ট কিংবা অন্যান্য আরো পণ্যের ক্ষেত্রেও। সুতরাং ,বুঝতেই পারছেন কেবল প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেই শেষ নয়, আধুনিক বাজার অর্থনীতিতেও তুলসীর নানান ডাইভার্সিফাইড পণ্য আপনার সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে শুধু এর ভেষজ গুণাবলি’র কারণে। এবার দেখা যাক তুলসীর ব্যবহারগুলো –

  • সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস এবং মধুর মিশ্রণ অত্যন্ত উপকারী। তুলসীর রস ফুটিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা কমে।
  • তুলসী চা মাথাব্যথায় কার্যকরী ফল দেয়।
  • বিশ্বের অনেক দেশে মানসিক চাপ কমাতে তুলসী ব্যবহৃত হয়। তুলসীর এন্টি অক্সিডেন্ট মানসিক চাপমুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
  • বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, তুলসী ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস প্রভৃতি রোগে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • তুলসী পাতার রস রক্তের সুগার ও কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • সার্জারির পর ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
  • স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধেও তুলসীর ভূমিকা অপরিসীম।

অর্থাৎ, বাসায় একটি তুলসী গাছ আপনার অনেক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।

থানকুনি

বাংলাদেশ সহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম  Centella asiatica । ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এই উদ্ভিদটির রয়েছে নানান গুনাগুন। আকারে খুবই ছোট (প্রায় ঘাসের আকারের) হওয়ায় খুব সহজেই আপনি এটিকে আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে লাগাতে পারেন। 

এতে সেন্টেল্লা এশিয়াটিকোসাইড, ব্রাহমিক এসিড, ব্রাহমোসাইড, এসিটিক এসিড প্রভৃতি রাসায়নিক উপাদান থাকে। ফলে এটি ভেষজ গুনাবলিতে সমৃদ্ধ একটি উদ্ধিদ।

থানকুনি গাছের গুনাগুন

থানকুনি পাতার চাহিদা গ্রাম এবং শহরে সমান। ঢাকা শহরের কাঁচাবাজার এবং অলিগলির শাক বিক্রেতাদের কাছে আপনি এটি সবসময়ই পাবেন। সাধারণত পেটের অসুখের চিকিৎসায় থানকুনি পাতা বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদের সাথে এর খাওয়ার পদ্ধতিতে কিছুটা ফারাক আছে। আপনি রস করে এবং চিবিয়ে তো খেতে পারবেনই, এর সাথে সাথে থানকুনি পাতা দিয়ে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু শুকতো । যেভাবেই খান না কেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে থানকুনির ভূমিকা অপরিসীম। এর থেকে আপনি যে যে উপকার পেতে পারেন তা হলো –

  • পেটের অসুখের নিরাময়ে থানকুনি পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • আমাশয়ের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
  • প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকার ফলে এটি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • মুখের ব্রণ দূর করে।
  • শরীরের ক্ষত এবং ঘা সারাতে সাহায্য করে।
  • সাময়িকভাবে কাশি থামাতে সাহায্য করে।
  • গলা ব্যথার জন্য উপকারি।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা

ঘৃতকুমারীর ইংরেজি নাম মেডিসিনাল অ্যালো। বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera (অ্যালোভেরা)। এটি অ্যালো পরিবারভুক্ত একটি রসালো উদ্ভিদ। দেখতে ফনীমনসার মতন হলো অ্যালোভেরা  ফনীমনসার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। 

এর উৎপত্তি আফ্রিকায়। অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এই বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদটির পাতায় কিছুটা কাঁটার মতন ভাব থাকে। পাতা পুরু হয়। এর পাতার ভেতরে লালার মতন পিচ্ছিল শাঁস অংশটিই আসলে রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণত শেকড় থেকে গজানো ডাল বা ‘শাখা’র সাহায্যে এর বংশবৃদ্ধি ঘটে। 

ঘৃতকুমারীতে অন্তত ২০ রকমের খনিজ পদার্থ রয়েছে। এছাড়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২২ টি অ্যামিনো এসিডও ঘৃতকুমারীতে দেখা যায়। এছাড়াও ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E  ঘৃতকুমারীতে দেখা যায়। ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়।

অ্যালোভেরা গাছের উপকারিতা

রূপচর্চা থেকে শুরু করে মাথা ঠান্ডা রাখা। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী দ্বারা হয় না এমন কাজ নেই। বাসার টবে একটি ঘৃতকুমারীর গাছ থাকা মানেই আপনি সময়ে অসময়ে তা ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরার শরবত ঢাকা শহরের একটি জনপ্রিয় পানীয়। আপনি রাস্তা-ঘাটে চলতে ফিরতে হরহামেশাই দেখতে পাবেন এর জুস বিক্রি হচ্ছে, চাহিদাও অনেক। এই চাহিদার কারণ – “এর উপকারী গুণাগুণ”। এক নজরে দেখে নেয়া যাক অ্যালোভেরা গাছে কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের উপকার করছে।

  • ঘৃতকুমারী শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথার স্থানে ঘৃতকুমারী ব্যবহার করলে এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • ঘৃতকুমারীর জুস দাঁত ও মাড়ির ব্যথা কমায়। মুখের ইনফেকশন সারাতেও এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
  • অ্যালোভেরা জুসের এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যালোভেরা মানুষের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে দিয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও কার্যকর।
  • ঘৃতকুমারীতে থাকা অ্যালো ইমাডিন স্তন ক্যান্সারের বিস্তারকে প্রতিরোধ করে থাকে। 
  • অ্যালোভেরা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
  • অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

নিসিন্দা

বৈজ্ঞানিক নাম Vitex negundo । নিসিন্দা গাছের পাতা বহুকাল ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় রোগ চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিসিন্দা গাছ আকারে ২ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আপনি আপনার বাড়ির বারান্দায় নিসিন্দা বনসাই করে লাগাতে পারেন বা ছোট নিসিন্দা গাছও লাগাতে পারেন।

নিসিন্দা গাছের উপকারিতা

নিসিন্দা বড় গাছ। গ্রামের বাড়ির আঙিনায় হরহামেশাই আপনি নিসিন্দার দেখা পেতে পারেন ।তবে আপনি যদি আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে নিসিন্দা গাছ লাগাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এর বনসাই করে নিতে হবে। একটি নিসিন্দা গাছ বাসায় থাকা মানেই এটি আপনার ওষুধের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। বিশেষত শহর অঞ্চলে প্রায় প্রতি বাসাতেই এমন লোক থাকে যার মাথায় খুশকির সমস্যা । নিসিন্দা খুশকি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া এর আর যেইসব গুণ আছে তা হলোঃ-

  • স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে নিসিন্দা পাতা ব্যবহৃত হয়।
  • মলদ্বারের ক্ষত সারাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • খুশকি ও টাকের চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
  • ক্ষতস্থান ও ফোঁড়া সারানো ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
  • নিসিন্দা পাতার গুড়া মেদ হ্রাসে সহায়তা করে।
  • কৃমি সারাতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানের চুলকানি, ঘা,পাঁচড়া প্রভৃতি নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • নিসিন্দা গাছের বাকল চায়ের মতন করে খেলে হাঁপানি সারিয়ে তোলে।
  • দেহের উপরের কোন জায়গায় টিউমার হচ্ছে দেখা গেলে যদি নিসিন্দা পাতা বেঁটে লাগানো হয় তবে তা সারিয়ে তোলে।
  • এটি বাতের ব্যথা সারিয়ে তোলে।
  • শিশুদের শয্যামূত্র বন্ধ করতে নিসিন্দা অত্যন্ত কার্যকরী।

নিম

নিম এমন একটি ঔষধি গাছ যার পাতা, ডাল, ছাল, বাকল ইত্যাদি প্রায় সবই কাজে লাগে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica । বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সর্বত্র নিমগাছ পাওয়া যায়। এটি প্রায় ৪০/৫০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়।

গ্রামের বাড়ির আঙিনায় বড় একটি নিমগাছ আমাদের দেশের অত্যন্ত পরিচিত একটি দৃশ্য। কিন্তু, শহরের বাসার বারান্দায় সেই সুযোগ না থাকায় নিমের বনসাই আপনি লাগাতে পারেন। যেহেতু এই গাছ অত্যন্ত উপকারী; সেহেতু আপনার বারান্দার বাগানে একটি নিমগাছ থাকাই উচিত।

নিমগাছের উপকারিতা

নিসিন্দার সাথে সাথেই যেই গাছটির নাম চলে আসে সেটি হচ্ছে নিম। বাংলা সাহিত্যের রথী-মহারথীরা নিমকে খাদ্য হিসেবে খলনায়কের আসনে বসালেও নিমের যেই উপকারিতা তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের সবচাইতে পরিচিত দৃশ্যগুলির একটি হচ্ছে বাড়ির আঙিনায় একটি খাড়া নিমগাছ। নিমের পাতা থেকে শুরু করে ফল ,ডাল এমনকি ছালবাকল পর্যন্ত উপকারী। নিম একটি বৃক্ষ ক্যাটাগরির উদ্ভিদ। সুতরাং, আপনি বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে নিমগাছ লাগাতে চান তাহলে অবশ্যই তা বনসাই করে নিতে হবে। নিমপাতার ব্যবহারঃ-

  • শিশুদের কৃমি উপশম করতে নিম পাতার রস ব্যবহৃত হয় ।
  • বুকে কফ জমে থাকলে তিন/চারদিন নিম পাতার রস নিয়মিত পান করলে তা বুকের কফ সরিয়ে দেয়।
  • নিমের পাতা হাল্কা বেটে মাথায় ব্যবহার করলে তা উকুন নাশ করতে সহায়তা করে।
  • পোকা-মাকড়ে কামড়ালে বা হুল ফোটালে সেখানে নিমের পাতা বা ছাল বেটে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
  • খোসপাঁচড়া, দাদ প্রভৃতির চিকিৎসায় নিমপাতা বা তার ছাল-বাকল খুবই কার্যকরী।
  • নিমের তেল গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • পেটের অসুখ বা পাতলা পায়খানায় নিমের রস খুবই উপকারী।

বাসক

বাসক ছোট গুল্মজাতীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda । এটি এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। বাসকের তাজা অথবা শুকনো পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাসকের ঔষধি গুনাগুণ

বাসক পাতা শ্লেষ্মা বা কফের চিকিৎসায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শ্বাসযন্ত্র সুস্থ রাখতে এর তুলনা হয় না। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ার ফলে দেখা যায় এই শহরজোড়াই আসলে কফের রোগী। এই অবস্থায় আপনার বাসার বারান্দায় একটি বাসক গাছ থাকা মানেই আপনার ওষুধের পেছনে খরচ কমে যাওয়া 

  • বাসক শ্লেষ্মা বা কফ সারাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • হাঁপানি ও শ্বাসজনিত রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
  • খোস ,দাদপাঁচড়া সারাতেও এটি ব্যবহৃত হয়।
  • প্রসাবের রাস্তায় জ্বালা যন্ত্রনা সারাতেও এটি ব্যবহৃত হয়।
  • উকুননাশক হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়।

গাঁদাফুল

গাঁদা একটি সুগন্ধী ফুল। এই গাছটি বাসায় থাকলে একদিকে যেমন আপনার বারান্দার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনভাবেই এর ঔষধিগুণও অনেক। গাঁদার বৈজ্ঞানিক নাম Tagetes erecta । আপনি খুব সহজেই আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা বাড়ির ছাদে গাঁদা গাছ লাগাতে পারেন। 

বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরণের গাঁদা দেখা যায়।

ক) আফ্রিকান গাঁদাঃ- এই ধরনের গাঁদা সাধারণত হলুদ রং এর হয়ে থাকে।

খ) ফরাসি গাঁদাঃ-  এই ধরণের গাঁদা লালচে রং এর হয়ে থাকে । ফলে এটি রক্তগাঁদা নামেও পরিচিত।

গাঁদার ভেষজ গুণ

গাঁদা সাধারণত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে ব্যবহার করা হলেও এর ভেষজ এবং ওষধি গুণাগুণ অপরিসীম। গাঁদাফুলের সকল জাতের থেকেই আমরা এসব উপকারিতা পেতে পারি। আপনার বারান্দায় কিংবা ছাদে  গাঁদা ফুলের বাগান থাকা মানেই “একের ভেতর দশ”। একদিকে বিভিন্ন উৎসব-উপলক্ষ্যে ঘর সাজানোও হয়ে গেলো আবার ঔষধি গুণাগুণও পাচ্ছেন। চলুন দেখে নেয়া যাক গাঁদাফুলের ভেষজ কিছু গুণাগুণ – 

  •  গাঁদা ফুলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদান মানবদেহের ক্যান্সার কোষ এর বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।
  • এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • গাঁদা ফুলের পাতা কোথাও পিষে লাগালে ক্ষত ভাল হয় এবং রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
  • এছাড়া হাড়ের ক্ষয় রোধ, আর্থ্রাইটিস ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতেও গাঁদাফুল সাহায্য করে।

পুদিনা

পুদিনার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Mentha spicata । এটি এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যা খুব সহজেই আপনি আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে লাগাতে পারবেন। ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন এবং সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। ঘরে সাধারণত হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে পুদিনা পাতা চাষ করা হয়।

পুদিনার ভেষজ গুণ

পুদিনা পাতায়  ভিটামিন এ, সি আর বি-কমপ্লেক্স আছে, যা ত্বকের যত্নে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এতে আছে আয়রণ, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। এই খনিজ উপাদানগুলো রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’ এর মাত্রা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অটুট রাখে। 

এছাড়া হজমে সহায়ক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমানে থাকার ফলে হজমের জন্য উপকারী “এনজাইম” তৈরি করে থাকে। এছাড়া এতে থাকা “এসেন্সিয়াল অয়েল” এর রয়েছে জীবাণু নাশক ক্ষমতা। অর্থাৎ, পুদিনা গাছ আপনার বাসায় থাকা মানে আপনি একদিকে যেমন সুগন্ধি হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারছেন আবার এর বিপুল ভেষজ গুণাগুণের ব্যবহারও আপনি করতে পারছেন। পুদিনার গুণাবলিঃ-

  • পুদিনায় থাকা রোজমেরিক এসিড হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করে।
  • স্তন, লিভার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার রোধ করে।
  • পেটের সমস্যা উপশমে দারুণ কার্যকরী।
  • খুশকি ও উকুনের চিকিৎসায় সহায়ক।

সতর্কতাঃ- পুদিনা পাতা অবশ্যই প্রয়োজনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। অতিরিক্ত পুদিনা পাতার ব্যবহার মানুষের শরীরের যৌন উদ্দীপনা কমিয়ে দেয়।

পাথরকুচি

পাথরকুচি বীরুৎজাতীয় একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Kalanchoe pinnata । অদ্ভুত এই উদ্ভিদটির পাতা থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়। সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি ঔষধি হিসেবেও পাথরকুচি গাছ অত্যন্ত কার্যকরী। 

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

পাতা থেকে জন্ম নেয়া ভেষজগুণ সংবলিত এই সুন্দর উদ্ভিদটি খুব সহজেই আপনি টবে লাগাতে পারেন। এই গাছ দিয়ে সারানো যায় নানান রোগ। পাথরকুচির সবচাইতে বড় সুবিধার দিক হচ্ছে এই গাছটি লাগানোর জন্য আপনাকে বেশি অর্থ কিংবা জায়গা খরচ করতে হচ্ছে না। এছাড়া এর ঔষধি গুণের সুবিধা তো পাচ্ছেনই । পাথরকুচির কিছু উপকারি গুণ দেখা যাকঃ- 

  • কলেরা, ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয় সারাতে এটি খুবই কার্যকরী।
  • সর্দিতে পাথরকুচির রস গরম করে খেলে তা ভাল কাজ করে। 
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মূত্রথলির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও পাথরকুচি ব্যবহার করা হয়।
  • মৃগীরোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
  • ত্বকের এলার্জি সারাতে পাথরকুচি ব্যবহৃত হয়। 

জবা

জবা একটি চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। যাঁর বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus rosa-sinensis । গ্রীষ্মকাল এবং শরৎকালে জবা ফুল ফুটে থাকে। ফুল হিসেবে জবা খুবই জনপ্রিয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এর আলাদা ধর্মীয় তাৎপর্যও রয়েছে। তবে শুধু ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্যেই জবার সকল তাৎপর্য শেষ হয়ে যায় না। এর ঔষধি গুরুত্বও অপরিসীম। 

জবার উপকারিতা

আপনি গানে কবিতায় যেই লাল জবা ফুলের এত প্রশংসা শুনেছেন, যেই লাল জবা ফুল প্রেমিকেরা তাঁদের প্রেমিকাদের খোঁপায় বেঁধে দিতে চান, তাঁর ভেষজ গুরত্ব কোন অংশেই কম নয়। বিশেষ কারো কাছে থেকে পাওয়া লাল জবা যেমন “হৃদয়ের” রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারে, সেই লাল জবাই আবার আপনি ব্যবহার করতে পারেন “দেহের” রক্তক্ষরণ বন্ধ করার কাজে। এরকম বিশেষ গুণের অধিকারী উদ্ভিদ তো আপনার বারান্দায় কিংবা ছাদে জায়গা পেতেই পারে। দেখে নেয়া যাক, জবার উপকারিতা – 

  • চর্মরোগ কিংবা হাতের তালুর ছাল ওঠার প্রতিকার হিসেবে জবাফুল ঘষে ব্যবহার করা হয়।
  • বমি বমি ভাব দূর করতে জবা ফুলের শরবত খেতে পারেন।
  • নারীদের অনিয়মিত মাসিক এবং অতিস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জবা ফুল ব্যবহৃত হয়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *