ব্লু-ডেইজের নীলাভ আলো মনে প্রশান্তি আনে

ব্লু-ডেইজ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদের আদি নিবাস ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ব্লু-ডেইজ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল Evolvulus nuttallianus. ব্লু-ডেইজ ফুলের পাতাগুলি সরু এবং লম্বা হয়। ফুলগুলো ছোট এবং নীল রঙের হয়। সাধারণত গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকে শরতের শুরু পর্যন্ত ফুল ফোটে। ব্লু-ডেইজ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাদ বাগানের ফুল। এটি সহজেই চাষ করা যায় এবং যত্ন নেওয়াও সহজ। একসাথে অনেকগুলো ফুল ফোটে, গাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকে। ফুলসহ পুরো গাছটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে একটুকরো আকাশ মনে হয়। যেখানে সবুজ পাতাগুলোকে মনে হয় অরোরা আর নীল ফুলগুলো অরোরার স্রোতে তারার মত জ্বল জ্বল করছে । এ যেন কল্পনা, এ যেন অন্যরকম ঘোর লাগা এক মোহ। সেই মূহুর্তে যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন মিউজিক থাকতো তাহলে বোধয় অর্ণবের গাওয়া প্রিয় সেই গানের লাইনটা চলতে থাকতো –

তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো
ভোরের রঙ রাতে মিশে কালো

ফুলগুলো যেন সত্যিই নীলাভ আলো ছড়ায় এবং মনে প্রশান্তি আনে। ফুলগুলো এতটাই আকর্ষণীয় যে পাখিদেরও আকর্ষণ করে।

বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হওয়ায় গাছটি একবার রোপন করলে অনেক বছর ধরে ফুল পাওয়া যায়। এই গাছের বৃদ্ধিতে বিশেষ কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না তাই আপনি যদি একজন নতুন বাগানী হন তাহলেও খুব সহজে ছাদে বা বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করতে পারেন। চাইলে গাছটি আপনার প্রিয় বেলকুনিতেও রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের প্রবাহ আছে সেই স্থানটি নিশ্চিত করতে হবে।

কিভাবে ব্লু-ডেইজ চাষ করবেন?

ব্লু-ডেইজ ফুল চাষ করতে হলে, উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়াযুক্ত জায়গা বেছে নিতে হবে। যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। বলে রাখা ভালো যে এই গাছ সকালের রোদ পেতে পছন্দ করে। মাটিতে সরাসরি বীজ বপন করতে পারেন অথবা চারাগাছ লাগাতে পারেন। ব্লু ডেইজ ফুলের বীজগুলি সাধারণত বসন্তের মাঝামাঝি থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত বপন করা হয়। চারাগাছগুলি সাধারণত বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের শুরুতে লাগানো হয়। এই গাছটির আরো একটা মজার ব্যাপার হলো খুব সহজেই এর ডাল থেকেও চারা করা যায়। ব্লু-ডেইজ গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে এবং মাটিতে জৈব সার দিতে দিতে হবে। ব্লু-ডেইজ গাছে সাধারণত খুব সহজে রোগে বা পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না। পোকামাকড় এবং রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য মাঝে মাঝে কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।

ব্লু-ডেইজের ঔষধি গুণ

এছাড়াও, ব্লু-ডেইজ ফুলের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি ব্যথা, প্রদাহ, অ্যালার্জি, ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর, জন্ডিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা এবং চুলের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *