সভ্যতার ইতিহাস অনুযায়ী মানুষ কৃষি আবিষ্কার করেছিলো ১০-১২ হাজার বছর আগে। তখন কৃষিতে ব্যবহৃত হতো মাটি খোড়ার জন্য পাথরের কোদাল ও বীজ বোনার জন্য লম্বা গাছের ডাল। ধীরে ধীরে মানুষ আবিষ্কার করে কাঠের লাঙল। পরবর্তীতে সেটাতে জুড়ে দেয় মোষ বা গরু। মানুষের কায়িকশ্রম কমে আসে।
দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় মানুষ কৃষিতে আরও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করে। আজ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে কৃষিতেও ঘটেছে দারুণ বিপ্লব। উন্নত দেশে বিঘার পর বিঘা জমি মানুষ চাষ করছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। তাতে যেমন কায়িকশ্রমের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে, তেমনি ফলনও বেড়েছে কয়েকগুণ। উন্নত দেশের কৃষি প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আপনার বাগানের যত্নেও যুক্ত করতে পারেন এমন কিছু যন্ত্রপাতি।
বাড়িতে বাগান করাবার কিছু ধাপ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব ধাপ অতিক্রম করতে হয়। একটি আদর্শ বা আধুনিক বাগানের কাজকে সহজ ও দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। মাটি তৈরি, মাটি নিড়ানি, সার ও কিটনাশক প্রয়োগ, গাছ ছাঁটাই বা প্রুনিংসহ গাছের আদর্শ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন বাগানের সঠিক যত্ন। আর বাগানের যত্নের জন্য কিছু উপকরণ আপনার হাতের কাছে থাকলে তা কাজকে করে দেবে শতগুণ সহজ ও আরামদায়ক।
টব
টব সাধারণত মাটি, প্লাস্টিক, সিরামিক বা ধাতুর তৈরি হতে পারে। বাগানের সবচেয়ে জরুরী উপকরণ হচ্ছে টব। বিভিন্ন সাইজের টব বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণের উদ্দ্যেশ্যে ব্যাবহার করা হয়। নতুন গাছ লাগাতে বা পুরনো গাছ প্রতিস্থাপিত করতে টব প্রয়োজন। বারান্দার গ্রিলে ঝুলানো বা আটকানো যায় এমন ছোট ছোট প্লাস্টিকের টব এখন বাজারে বেশ জনপ্রিয়।
কোদাল
কৃষি কাজে আবহমান কাল থেকে কোদালের ব্যবহার হয়ে আসছে। মাটি কাটা ও ভাঙার অপরিহার্য উপকরণ হলো কোদাল। এটি বিভিন্ন সাইজের হয়। এর নিম্নাংশ অনেকটা বেলচার মতো। কোদালের হাতলটি সাধারণত বাঁশের তৈরি হয়।
প্রাচীনকালে এর হাতল হিসেবে বাঁশের বদলে পশুর হাড় ব্যবহার করা হতো। বাগানের কোদাল সাধারণত মাঝারি আকৃতির হয়। এতে দেড় ফুট হাতল থাকে।
মাটি চালনি
বাগানের মাটি তৈরির অন্যতম উপকরণ হলো চালনি। মাটিকে মিহি করতে চালনির বিকল্প নেই। বাগানের মাটি আলগা ও ঝুরঝুরে করতেও চালনিতে চেলে নিতে হয়৷ তাছাড়া মাটিতে থাকা ইটের টুকরা, বিভিন্ন গাছের শিকড়ের মতো অপ্রয়োজনীয় উপাদান চালনিতে আটকে যায় ফলে ফ্রেশ মাটি পাওয়া যায়৷ চালনিতে চালা মাটির সাথে সহজেই অন্যান্য উপাদান যেমন গাছের খাবার, সার ইত্যাদি ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া যায়। বিশেষ করে যারা টবে চারা রোপণ করতে চান তারা অবশ্যই মাটি চেলে নেবেন।
গার্ডেন গ্লাভস্
অনেকেই গার্ডেন গ্লাভস্ ছাড়া বাগানের মাটি তৈরি ও বাগান পরিচর্যা করেন৷ তবে গার্ডেন গ্লাভস্ আপনার হাতকে সুরক্ষা দেবে। মাটিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান, বিষাক্ত কীটপতঙ্গ থাকে, যা আপনার হাতে ফুসকুড়ি ও ক্ষতের সৃষ্টি করে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক সার যেগুলো মারাত্মক বিষাক্ত। এসব উপাদান নাড়াচাড়া করার জন্য গার্ডেন গ্লাভস্ খুবই দরকারি উপকরণ। এছাড়া শীতকালে বাগানের পরিচর্যায় গার্ডেন গ্লাভস্ হাতকে গরম রাখতে সহায়তা করবে। কাটিং বা প্রুনিং করার সময় গ্লাভস্ পড়ে নেওয়া উচিৎ। আপনার হাতকে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে একজোড়া গার্ডেন গ্লাভস্ অবশ্যই বাগান যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকায় রাখবেন।
বুট
বুট আপনাকে কাদা মাটি ও ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে সুরক্ষা দেবে। এছাড়া বাগানে আলাদা বুট ব্যাবহার করলে বাইরে থেকে রোগ জীবাণু আসার ঝুঁকি কমে যায়। এদিক থেকে বাগানের গাছ ও আপনার নিজের জন্যও বুট বেশ স্বাস্থ্য সহায়ক উপকরণ।
এপ্রন
বাগান মানেই সৌখিনতা। কিন্তু বাইরে থেকে রোগ জীবাণুর আক্রমণে আপনার বাগানের মূল্যবান গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে এপ্রন রোগ জীবাণুর সংক্রমণ রোধে ভূমিকা পালন করবে। একই সাথে বাগানে থাকা কোনো অজানা জীবাণু আপনার দেহে সংক্রমণের শঙ্কাও দূর করবে।
বেলচা
বেলচা দিয়ে বাগানের মাটি সরানো, মাটি ভরাট করা হয়ে থাকে। বীজ বপনের জন্য বেলচার ব্যবহার করা হয়। টবে মাটি ভরাটের জন্যও বেলচার দরকার। খুব সহজেই বেলচা দিয়ে মাটি উত্তোলন করা যায়। হাত দিয়ে মাটি ভরাটের ক্ষেত্রে শ্রম ও সময়ের আধিক্য খুবই স্পষ্ট। বেলচা আপনাকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করাতে সক্ষম। বেলচা বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। ছাদবাগানে মাঝারি বা ছোট আকারের বেলচা নির্বাচন করতে পারেন। তবে সরাসরি মাটিতে চারাগাছ রোপণ করতে তুলনামূলক বড় বেলচার ব্যবহার আবশ্যক।
শাবল বা খন্তা
ছাদ বাগানে হাফ ড্রামে গাছ লাগানো হয়। ৬ মাস পরপর ড্রামের চারপাশে এক বিঘত পরিমাণ মাটি গর্ত করে নতুন মাটি দেয়ার নিয়ম রয়েছে। আর এধরনের খোড়াখুড়ির কাজে শাবল আর খন্তা হলো আপনার আসল হাতিয়ার।
গার্ডেন ট্রোয়েল
ট্রোয়েল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। রাজমিস্ত্রী ট্রোয়েল, গার্ডেন ট্রোয়েল। টবের মাটি খুঁচিয়ে দেওয়া, মাটি থেকে চারাগাছ স্থানান্তরের জন্য গার্ডেন ট্রোয়েল ব্যবহার করা হয়৷ এর অগ্রভাগ চোখা ও ধারালো। সার প্রয়োগের জন্য মাটির উপরিভাগ খুঁচিয়ে দিতে হয়। এজন্য ট্রোয়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। ট্রোয়েল দিয়ে খুব সহজেই মাটির উপরিভাগ খুঁচিয়ে মাটিকে অাগলা করে নেওয়া যায়৷
গার্ডেনিং ফর্ক
গার্ডেনিং ফর্ক এর অন্যনাম হলো আঁচড়া। আগাছা গাছের বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। এরা গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য খেয়ে ফেলে। এসব আগাছা দমন করতে গার্ডেনিং ফর্ক বেশ কার্যকর। মাটিতে আঁচড় কেটে দেওয়া ও এর আগাছা দমনের জন্য গার্ডেনিং ফর্ক ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের শিকড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর মাথা ধারালো ও চোখা হয়ে থাকে। বাগানে বহুল ব্যবহৃত একটি যন্ত্র হলো গার্ডেনিং ফর্ক।
প্রুনার
প্রুনার বা ডাল ছাটাই যন্ত্র বাগানিদের খুবই প্রয়োজনীয়। প্রুনার কয়েক আকৃতির হয়। বড়, মাঝারি, ছোট। পর্যায়ক্রমে বড়, ছোট ডাল ছাটাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ ডাল ছাটায়ের জন্য ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করলে সেটি মসৃণ হয় না। অনেক সময় গাছের ডাল কাটতে গিয়ে গাছের মূল অংশ নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। কিন্তু প্রুনার দিয়ে কাটলে এসব ঝামেলায় পড়তে হয় না। কিছুকিছু গাছ নিয়মিত প্রুনিং করতে হয়। এসব গাছের জন্য বাগানিদের অবশ্যই একটি প্রুনার প্রয়োজন।
প্রুনিংস্
কিছু মোটা ডাল থাকে যা আপনি প্রুনারের সাহায্যে সঠিকভাবে কাটতে পারবেন না। একারণে আপনার দরকার একটি করাত। বাগানের ডালপালা কাটার এমন করাতকেই প্রুনিংস্ বলে। ছোট ও প্রচণ্ড ধারালো হওয়ায় সহজেই এটি দিয়ে অপেক্ষাকৃত মোটা ডাল কাটা সম্ভব হয়।
কাঁচি
কাঁচির রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার৷ অনেক সময় গাছে অপ্রয়োজনীয় পাতা থাকে যা গাছের জন্য ক্ষতিকর। এমন পাতা ছেটে ফেলার জন্য কাঁচি প্রয়োজন। অনেক সময় ফুল ও ফল সরাসরি ছিড়লে মাতৃগাছ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কাঁচি ব্যবহার করা উচিৎ। যাঁরা বনসাই করেন তাদের জন্য গার্ডেন কাচি অপরিহার্য উপকরণ। ছোট গাছের ডাল ছাঁটাই ও গাছকে সুন্দর গড়নে তৈরি করার জন্য কাঁচি ব্যবহৃত হয়।
ছুরি ও এন্টিকাটার
অনেক বাগানীই আছেন যারা গাছে কলম করতে পছন্দ করেন। এর ফলে সহজেই এক গাছ থেকে অনুরূপ গুণ সম্পন্ন আরেকটি গাছের চারা পাওয়া যায়। যেকোনো ধরনের কলম সেটা গুটি কলম, কাটিং কলম বা জোড় কলম যাই হোক না কেন একটি ধারালো ছুরি ও এন্টিকাটার আপনার অবশ্যই দরকার পড়বে। এর সাহায্যে গাছের ছাল কাটা বা কাটিং এর ক্ষেত্রে তির্যকভাবে কাটা সম্ভব নাও হতে পারে। এছাড়া চট জলদি প্লাস্টিকের বোতল কেটে টব বানাতে অবশ্যই ছুরি বা এন্টিকাটার আপনাকে সাহায্য করবে।
স্প্রেয়ার
গাছকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করা প্রয়োজন। তরল সার কিংবা এয়ার প্লান্ট ও বিশেষ কিছু ক্যাকটাসে পানি স্প্রে করতে হয়। এসব তরল উপাদান গাছে প্রদানের অন্যতম মাধ্যম স্প্রেয়ার। স্প্রেয়ার ছাড়া যেকোনো তরল উপাদান স্প্রে করা অসম্ভব৷ বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্প্রেয়ার পাওয়া যায়। আপনার সুবিধা মতো যেকোনো স্প্রেয়ার আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন।
ফগ স্প্রেয়ার
আপনি যদি একটি গ্রিন হাউজের মালিক হোন তবে ফগ স্প্রেয়ার অত্যাবশ্যক ভাবেই আপনার কাছে রাখতে হবে। এটি বাতাসে আদ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। হাইগ্রোমিটার এর দেয়া তথ্য অনুসারে এটি বাতাসে কুয়াশা ছিটিয়ে আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
গার্ডেন শাওয়ার
শুষ্ক মৌসুমে গাছে ধুলাবালি জমে থাকে। যা গাছের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। গাছের পাতায় বেশি ধুলাবালি জমলে গাছটি সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। এছাড়া ধুলাবালি সালোকসংশ্লেষণেও ব্যাঘাত ঘটায়। এজন্য গাছকে সব সময় পরিষ্কার রাখা দরকার। গার্ডেন শাওয়ার দিয়ে খুব সহজেই গাছকে ধুয়ে দেওয়া যায়৷ গার্ডেন শাওয়ারে লিভার থাকে ও একে পানির পাইপের সাহায্যে যুক্ত করতে হয়। লিভারে চাপ দিলেই শাওয়ার দিয়ে পানি বের হয় ও ছড়িয়ে পড়ে। তাই গাছকে পরিষ্কার রাখতে গার্ডেন শাওয়ারের বিকল্প নেই।
ওয়াটার ক্যান
গাছের জন্য পানি অপরিহার্য৷ সঠিকভাবে পানি দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ওয়াটার ক্যান৷ এটি ব্যবহার করলে পানি সুষমভাবে গাছের চারদিকে ছড়িয়ে দিতে পারবেন৷ মগ ব্যবহার করলে পানি শুধু এক জায়গায় পড়বে। বাগানে বেশি গাছ থাকলে মগে পানি দেওয়া অত্যন্ত সময়ে সাপেক্ষ ব্যাপার। ওয়াটার ক্যান দ্বারা পানি প্রদানে যেমন কম সময় লাগে তেমনি গাছের চারপাশে সম মাত্রায় পানি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। তাই সহজ উপায়ে পানি দিতে অবশ্যই ওয়াটার ক্যান ব্যবহার করুন।
বালতি
বালতি শুধু আপনার বাগানের পানি সংরক্ষণের জন্যই নয়, এটি কিচেন ওয়েস্ট থেকে হোমমেড অর্গানিক সার তৈরি করতেও কাজে লাগবে। বালতিতে আপনার কিচেনের সবজি ও মসলার খোসা সংগ্রহ করে করে ৩ থেকে ৭ দিন ভিজিয়ে রেখে সে পানি ওয়েস্ট সহ গাছের গোড়ায় ঢালতে পারেন। এছাড়া ফল সংগ্রহ, বাগানের নানা জঞ্জাল ফেলতে ময়লার ঝুড়ি হিসেবেও কাজ করবে বালতি।
পলিনেট
আপনার শখের বাগানটি যদি হয় ছাদে, তবে এক চিলতে পলিনেট গ্রিন হাউজ থাকতেই পারে। ৪ থেকে ৬ ফিট উঁচু বাঁশের কাঠামো তৈরি করে তার উপরে স্বচ্ছ পলিনেট দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করা যায় ব্যাক্তিগত এই গ্রিন হাউজ। এর ফলে আপনি সারা বছর বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে পারবেন। এছাড়া সিজনাল সবজি যেমন: ক্যাপসিকাম, লেটুস এর মত দামী আইটেমও সারাবছর ফলানো সম্ভব হবে।
সিডিং কাপ
সিডিং কাপ হলো ছোট ডিসপোজেবল কাপ। এতে বীজ বপন করলে চারা হবার পরে স্থানান্তরের সময় চারাকে মাটি থেকে আলাদা করতে হয় না। বরং কাপসহ একে সরাসরি টবে স্থানান্তর করা যায়। কাপটি সহজেই পচনশীল হওয়ায় তা মাটির সাথে মিশে যায়। সিডিং কাপ কাগজের হতে পারে বা অন্য পচনশীল দ্রব্যেরও হতে পারে। তবে বাজারে নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি নতুন কোকো সিডিং কাপ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। বীজ বা কাটিং থেকে চারা উৎপাদন আপনার লক্ষ্য হলে সিডিং কাপ আপনার অতীব প্রয়োজনীয় হতে পারে।
সিডিং ট্রে
সিডিং ট্রে সল্প স্থানে অধিক বীজ বপনের সুবিধা সম্পন্ন একটি আধুনিক ট্রে যাকে একত্রে অনেকগুলো সিডিং কাপযুক্ত থালাও বলা চলে। তবে এর সুবিধা হলো এটি বারবার ব্যবহার করা যায়। এর প্রতিটি কাপে আলাদা আলাদা করে বীজ বপন ও চারা হবার পর তা সহজেই টবে স্থানান্তর করা যায়। বীজগুলো পৃথক ভাবে বপন করা যায় বলে, একই বয়েসী চারার তুলনামূলক গঠন একই হয়। চারা ছোট বড় হবার ভয় থাকে না।
হাইগ্রোমিটার ও প্লান্ট কেয়ার মিটার
এটি আধুনিক মাপযন্ত্র, যা বাতাসের আদ্রতা ও তাপমাত্রা নির্দেশ করে। ইনডোর প্লান্টের ক্ষেত্রে যা খুবই জরুরি। বাতাসের আদ্রতা জানা থাকলে সহজে পানি স্প্রে করা যায়। প্রায় একই রকমভাবে প্লান্ট কেয়ার মিটার গাছের মাটির আদ্রতা নির্দেশ করে। এটি ড্রিপ ওয়াটারিং পাম্পের সাথে যুক্ত করে মাটির আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ড্রিপ ওয়াটারিং পাইপ ও পানির মিনি পাম্প
ড্রিপ ইরিগেশন হলো পানি সেচের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ড্রিপ ওয়াটারিং পাইপের সাহায্যে পানি গাছের গোড়ায় স্যালাইনের মত ফোটায় ফোটায় সরবরাহ করা হয়। ফলশ্রুতিতে সনাতন সেচ এর চেয়ে সময় বাচে ৮০%, পানি সাশ্রয় হয় ৭০% ও গাছ বাচে শতভাগ।
সনাতন পদ্ধতিতে গাছে পানি দিতে কষ্ট ও বিরক্তি বোধ হতে পারে। এছাড়া পানি অপচয় ও সময় অপচয় হয় অধিক। সে তুলনায় ড্রিপ ইরিগেশন সবচেয়ে সাশ্রয়ী ভালো পন্থা। এজন্য ড্রিপ ওয়াটারিং পাইপ প্রয়োজন। সাথে প্রয়োজন ৯ বা ১২ ভোল্টের পানির ছোট পাম্প।
মালচিং পেপার
আপনার বাগান যদি হয় সবজীর বা ফুলের, তাহলে মালচিং পেপার অবশ্যই লাগবে। মালচিং গাছের গোড়ায় মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। গাছের গোড়াকে আগাছা মুক্ত রাখে। আর আধুনিক মালচিং পেপার গাছকে নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। ক্যাপসিকাপ ও টমেটোতে অনেকেই মালচিং পেপার ব্যবহার করে থাকেন।
নেট বা বেড়া
আপনার বাগানকে সুরক্ষিত করতে অবশ্যই জাল বা বেড়া দিয়ে চারপাশ ঢেকে দিতে হবে। এছাড়া লতানো গাছ যেমন: আঙুর, ব্ল্যাকবেরী, মালবেরী, লাউ, কুমড়া, শিম ইত্যাদি গাছের জন্য ৪ থেক ৬ ফিট উঁচু মাচা তৈরি করতে নাইলনের নেট অতীব প্রয়োজনীয় উপকরণ হতে পারে।
ছোট ছিদ্রের নাইলনের জাল ১০ থেকে ১২ ফিট উঁচু করে পুরো ছাদে ঢেকে দিলে তা গ্রীষ্মের অতিরিক্ত রোদ থেকে গাছকে আরাম দিবে, ছাদে রোদের উত্তাপ কমাতে সাহায্য করবে আবার লতানো গাছের ক্ষেত্রে মাচা হিসেবেও কাজ করবে। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাখির হাত থেকে রক্ষা করতে এন্টিবার্ড নেট ব্যাবহার করেন। এর ফলে পাখি ফলের সংস্পর্শে আসতে পারে না।
গ্রাফটিং মোম, রাবার স্ট্রিপ, ফিতা ও পলিথিন স্ট্রিপ
গ্রাফটিং মোম গ্রাফটিং কলম এর জোড়ায় বায়ু ও পানিরোধী হিসেবে কাজ করে ও সহজে জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। রাবার স্ট্রিপ, ফিতা, পলিথিন স্ট্রিপ জোড় কলম বা গুটি কলম বাধতে ব্যাবহৃত হয়।
মেজারিং টেপ ও নিক্তি
বাগানে মাপামাপির কাজের জন্য মেজারিং টেপ ও নিক্তি আবশ্যক। টব থেকে শুরু করে ছাদের স্পেস, মাটির উচ্চতা সব কিছু মাপতে একটি মেজারিং টেপ আপনাকে সব সময় সহযোগিতা করবে। নিক্তি বা দাড়িপাল্লা যদি আধুনিক হয় তাহলে খুবই ভালো। সার, কীটনাশক, বীজ ও মাটি এসব মাপতে আপনার বাগানে একটি ডিজিটাল মিটার বা নিক্তি অবশ্যই জরুরী।
ফ্রুট পিকার ও প্ল্যাটফর্ম স্টেপ ল্যাডার
এই দুটো জিনিসই আম জাম ইত্যাদী বৃক্ষ জাতীয় ফল চাষীদের জন্য আবশ্যক। যারা বড় গাছের বাগান করেন তাদের জন্য অতীব জরুরী হলো ফ্রুট পিকার। উঁচু গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে এর জুড়ি নেই। এতে ফল সরাসরি মাটিতে না পড়ে পিকারের মাথায় আটকে থাকে। এতে ফল আঘাতপ্রাপ্ত হয় না ও দাগ পড়া বা পচন ধরার ভয় থাকে না।
প্লাটফর্ম স্টেপ ল্যাডারকে সহজ বাংলায় বলা যায় সিড়ি। তবে এটি A শেপের হওয়ায় কোনো কিছুতে হেলান দেয়ানো লাগে না, যেকোনো স্থানে ব্যবহার করা যায়। উঁচু গাছের প্রুনিং বা ফল পিকিং এ খবই গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেপ ল্যাডার।
ফ্রুট ব্যাগ
সবশেষে আসি ফল সংরক্ষণের কথায়। গাছে নতুন ফল এলে প্রায়শই এদের সাদা মাছি, মিলিবাগ, পিপড়া, বাদুর, কাঠবিড়ালী আক্রমণ করে। এছাড়া ক্রমাগত পাতার ঘষায় ফলে দাগ হয়ে যায়। এধরনের ক্ষতি থেকে ফল বাঁচাতে ব্যবহার করা হয় ফ্রুট ব্যাগ। পলি ব্যাগ দিয়ে কচি ফলগুলোকে মুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে ফল সরাসরি বাতাস ও গাছের পাতার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে। আবার সাদা মাছি সহ অন্যান্য পোকা-মাকড় থেকে নিরাপদ থাকে। জাপানে ব্যাপক হারে পলিথিন বা কাগজের তৈরি আপেল ব্যাগ ব্যবহার করা হয় আপেলকে কাঠবিড়ালির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। বাংলাদেশেও গাছে পেয়ারা সংরক্ষণে পলি ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
অন্যান্য
অন্যান্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে দড়ি বা রশি। চারা গাছ খুটিতে বাঁধার জন্যে বা বড়ো গাছকে টানা দিতে বা বারান্দায় টব ঝুলাতে অবশ্যই রশি বা দড়ির প্রয়োজন হয়।
এছাড়া আপনার বাগানে জৈব সারের যোগান থাকাও জরুরী। অর্গানিক শস্য উৎপাদনে নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
একইভাবে রোগ বালাই দমনে দরকার অকরগানিক পেস্টিসাইড যেমন: নিমের তেল, তুতে, কাচা হলুদ, খাবার সোডা ইত্যাদি।
ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে জরুরী হলো ডিমের খোসা, বাদামের খোসা, কলার খোসা চূর্ণ ইত্যাদি।
পরিশেষে বলতে চাই একবিংশ শতাব্দীতে বাগান করা সবচেয়ে বড় শৌখিনতা। সেটা ছাদে বা ইনডোর যেকোনো জায়গায় হতে পারে। আপনি উপকরণে যত সমৃদ্ধ থাকবেন ততই সহজ হবে আপনার বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করা। আর যত ভালো রক্ষণাবেক্ষণ হবে, তত ভালো থাকবে বাগানের গাছগুলো। সঠিক পরিকল্পনা, যন্ত্র ও উপকরণ থাকলে আপনি খুব সহজেই সাজিয়ে তুলতে পারবেন আপনার শখের বাগান।